সোমবার, ১৭ Jun ২০২৪, ১২:০০ অপরাহ্ন

পৃথিবীর আকাশে সূর্যের অনুচর

পৃথিবীর আকাশে সূর্যের অনুচর

স্বদেশ ডেস্ক:

ভিনগ্রহী (এলিয়েন) খুঁজতে মরিয়া মানুষ। এখনো সন্ধান মেলেনি। এই অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে একটি কথিত তত্ত্ব আছে- সম্ভবত ভিনগ্রহীরা পৃথিবীকে ও এর ধীমান অধিবাসী মানুষকে খুঁজে বের করে ফেলেছে এবং নিয়ত নজরদারি চালিয়ে যাচ্ছে। লালনের মতো বলতে হয়, ‘নড়ে চড়ে হাতের কাছে/খুঁজলে জনমভর মেলে না’।

ভিনগ্রহী সমাজের প্রতিনিধিরা কি কখনো কখনো দূর থেকে এসে পৃথিবীকে পর্যবেক্ষণ করে চলে যায়? কৌতূহলী মনে প্রশ্ন জাগে। এমন জিজ্ঞাসা আরও উসকে যায় এই চিন্তায়- দূর-দূরান্ত থেকে আগত ধূমকেতুরা কি ভিনগ্রহীদের ভেলা হতে পারে?

পৃথিবীর আকাশে এখন এ রকমই একটি ধূমকেতু উড়ে যাচ্ছে। কেতাবি নাম সি/২০২২ ই৩ (জেডটিএফ)। সূর্যের বৃহত্তর সংসারের সদস্য। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জনপ্রিয় বিজ্ঞানগ্রন্থ ‘বিশ্বপরিচয়’-এ এ ধরনের ধূমকেতুকে ‘সূর্যের বাঁধা অনুচর’ বলে অভিহিত করেছেন।

তবে সে এসেছে সৌরজগতের প্রান্তিক এলাকা থেকে। এত দূরপ্রান্তের অতিথি সে, যার পৃথিবীকে একবার দেখা দিতে হাজার হাজার বছর সময় লাগে। শেষবার ওর আবির্ভাব হয়েছিল ৫০ হাজার বছর আগে। এটা এমন একসময় যখন পৃথিবী দাপিয়ে বেড়াচ্ছিল নিয়ানডারথালরা। মানবপ্রজাতির প্রথম দিককার সদস্যরাও তখন বিকশিত হচ্ছিল। এর মানে, শেষবার পৃথিবীকে ঘুরে যাওয়ার সময় ধূমকেতুটি -এবং এতে যদি ধীমান ভিনগ্রহী থেকে থাকে, তবে তারাও- এই গ্রহে নিয়ানডারথাল ও মানুষকে দেখতে পেয়েছিল। ২০২৩ সালে এটি যখন আবার পৃথিবীর ঘাড় ঘেঁষে উড়ে যাচ্ছে, তখনো চেয়ে দেখলে এই ভূমে শুধু মানুষকে দেখবে, নিয়ানডারথাল ততদিনে গত হয়েছে কতশত বছরের ইতিহাস। সহসা প্রশ্ন আসে, এর পরের বার, ধরি এখন থেকে ৫০ হাজার বছর পেরিয়ে গেলে, ভিনগ্রহী অনুচর কিংবা সূর্যের সবুজ অনুচর যখন আবার পৃথিবীর আকাশ হয়ে ঘুরে যাবে, তখন কি এই মর্ত্যে সে মানুষের দেখা পাবে?

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ সংস্থা নাসার পরিসংখ্যান মতে, আজ ১২ জানুয়ারি ধূমকেতুটি সূর্যের সবচেয়ে কাছ দিয়ে উড়ে যাবে; তবে ব্যবধান কিন্তু কম নয়, সূর্য থেকে পৃথিবী যত দূরে, এর থেকেও দূর দিয়ে চলে যাবে ধূমকেতুটি। এটি উত্তর গোলার্ধের আকাশে সবচেয়ে কাছ দিয়ে যাবে ২ ফেব্রুয়ারি; তবু তফাত থাকবে বিস্তর- পৃথিবী থেকে চাঁদ যতদূরে আছে, এর থেকে ১০০ গুণ দূর দিয়ে চলে যাবে। পরিষ্কার আকাশে নভোদুরবিন ও বাইনোকুলারে এখন একে দেখা যাচ্ছে। ২১ জানুয়ারি খালি চোখে দেখতে পাওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা আছে। তবে ১০ ফেব্রুয়রি এটি এমন অবস্থানে থাকবে যে, মনে হবে লালগ্রহ মঙ্গলের পাশেই আছে।

২০২২ সালের ২ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় জিকি ট্রানজিয়েন্ট ফ্যাসিলিটির দুই জ্যোতির্বিজ্ঞানী- ব্রাইস বলিন ও ফ্রাঙ্ক ম্যাসি এই ধূমকেতু শনাক্ত করেন।

সৌরজগতের আদিতেই ধূমকেতুরা সৃষ্টি হয় বলে ধারণা। সৌরজগতের প্রান্তিক এলাকাগুলো শীতল। আর অমন প্রান্তিক এলাকার ধূমকেতু আলোচ্য এই ধূমকেতু। ফলে এটি সম্ভবত ধূলি, জল ও কার্বন ডাইঅক্সাইড দিয়ে গড়া।

এখন একে পর্যবেক্ষণ করার মধ্য দিয়ে বিজ্ঞানীরা সৌরজগতের অন্তত ৫০ হাজার বছরের বিবর্তন সম্পর্কে ধারণা পাবেন বলে আশা করা যায়।

দয়া করে নিউজটি শেয়ার করুন..

© All rights reserved © 2019 shawdeshnews.Com
Design & Developed BY ThemesBazar.Com
themebashawdesh4547877